• Breaking News

    ২০২৩ সালে কি আসলেই দুর্ভিক্ষ আসতে পারে ?

    famine-come-2023
    আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে দুর্ভিক্ষের কথা শুনেছি যে ২০২৩ সালে বিশ্ব দুর্ভিক্ষে পড়তে পারে ।
    শুধু শেখ হাসিনাও না জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস তার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেছেন, There is a real risk that multiple famines will be declared this year - and 2023 could be even worse.
    উক্ত দুই বিজ্ঞের কথা শুনে বোঝা যায় যে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে।

    এখন কথা হচ্ছে কেন বিশ্ব এই দুর্ভিক্ষে পড়তে পারে? চলুন তার বিশ্লেষণ করা যাক:

    কারণগুলো জানার আগে আমাদের জানতে হবে Bread basket সম্পর্কে। Bread basket হলো এমন জায়গা যেখান খেকে বিশ্ব্বের সবচেয়ে বেশি খাবার চাষ হয়। বিশ্বে এমন ৬ টি Bread basket আছে, এ ৬টির একটা থেকেও যদি কিছু কম চাষ হয় তাহলেই একটা ক্রাইসিস শুরু হয়। আমি এখানে দেশের নামগুলো বলব আপনি যদি বিস্তারিত জায়গার নাম জানতে চান গুগলে সার্চ করে নিবেন :
    ১। ব্রাজিল; ২। আমেরিকা; ৩। চায়না; ৪। কানাডা
    ৫। ASEAN এর সদস্যভূক্ত দক্ষিণ এশিয়ার ১০ টি দেশ; ৬। রাশিয়া-ইউক্রেন (যদিও আমি যখন এ সম্পর্কে রিসার্চ করতে গিয়ে Central black earth region পেয়েছি যা রাশিয়ায় তাও রাশিয়া-ইউক্রেন একসাথে রাখা, কারণ উইকিতে দেখলাম রাশিয়া-ইউক্রেন ২০২০/২১ এ বিশ্বের ১৮% শস্য আর আলজাজিরার তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৭০% সূর্যমূখী ফুলের তেল চাষ করে।)

    দুর্ভিক্ষ আসার সম্ভাব্য কারণসমূহ:

    রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ :

    দুর্ভিক্ষ আসার সম্ভাব্য কারণসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আগেই বললাম রাশিয়া-ইউক্রেন bead basket এর অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু ইউক্রেনে যুদ্ধ হচ্ছে তাই স্বাভাবিক ভাবেই এখানে পর্যাপ্ত চাষ সম্ভব হচ্ছে না। আর যাও চাষ হচ্ছে তাও কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বের হতে পারছে না। যদিও এক্ষেত্রে একটা খুশির সংবাদ হচ্ছে গত ২২/০৭/২০২২ এ জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন শস্যচুক্তি করেছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী শস্য কৃষ্ণসাগর দিয়ে বের হতে পারবে কিন্তু সেই চুক্তির ২৪ ঘণ্টা পর রাশিয়া ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে হামলা করে। যাইহোক চাষ না হলে কীভাবে আগের মতো রপ্তানি করবে? আর রাশিয়াকে কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য আমেরিকা বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে রাশিয়া থেকেও ওইভাবে শস্য বাহিরে আসতে পারছে না। আবার রাশিয়া সবচেয়ে বেশি সার রপ্তানিকারক দেশ হওয়ায় অনেক দেশের কৃষক সারের অভাবে চাষ করতে পারছে না। এর অনেক বড় প্রভাব পড়ছে ব্রাজিলের উপর। আর ব্রাজিল যেহেতু bread basket এর অন্তর্ভুক্ত তাই এটাও একটা অনেক বড় কারণ হবে দুর্ভিক্ষ আসার জন্য। তাছাড়া
    রাশিয়া তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং শীর্ষ গ্যাস রপ্তানিকারক। এর ফলে অনেক দেশে কৃষকরা তেলের অভাবে মেশিনের মাধ্যমে পানি সেচ দিতে পারছে না।

    জলবায়ু পরিবর্তন:

    এই ফুড ক্রাইসিস এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনও অন্যতম একটি কারণ। হয় খরা নাহয় বন্যা আর দুইটাই একেবারে মারাত্মক পর্যায়ের হয়। খরা হলে একেবারে শুকিয়ে সাগরের পানি পর্যন্ত কমিয়ে ফেলবে আর বন্যা হলে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে (সিলেট এর মতো)। যেমনটা ইউরোপের অনেক দেশে খরা হওয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

    সিন্ডিকেট:

    একটা প্রশ্ন, বিশ্বে যত খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় তা কি সবই মানুষ খায়? না এর মধ্যে গবাদি পশু-পাখির খাবার বা জ্বালানি আছে। এক্ষেত্রে বিশ্বের বড় শস্য কোম্পানিগুলো যদি কোন ক্রাইসিস এর মধ্যে সিন্ডিকেট করে তাহলে তা তাদের জন্য বিশাল লাভ হবে। বিশ্বে এমন ৪ টি কোম্পানি আছে যারা বিশ্বের সিংহভাগ শস্য বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। সে ৪টি হলো: the Archer-Daniels-Midland Company, Bunge, Cargill and Louis Dreyfus.
    এই কোম্পানিগুলো সম্পর্কে The Guardian অনলাইন এ একটি প্রতিবেদন লিখেছে যে এরা ফুড ক্রাইসিস এ খাদ্যশস্যের দাম বাড়ায় কিনা।এগুলোর মধ্যে Louis Dreyfus এর সম্পর্কে The Guardian বলেছে, “2021-এর জন্য আগের বছরের তুলনায় 80% বেশি লাভ হয়েছে, কারণ আয় প্রায় এক চতুর্থাংশ বেড়ে $1.62 বিলিয়ন হয়েছে৷” সেই একই প্রতিবেদনে সান্ড্রা মাট্রিনসোন, বোন্ডের পলিসিম্যানেজার, এর উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, “বড় বড় কৃষিখাদ্য কোম্পানিগুলি স্পষ্টতই হ্রাসকৃত সরবরাহ এবং বর্ধিত চাহিদাকে পুঁজি করছে, যা পণ্য ব্যবসার দ্বারা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্টক মার্কেট, যেহেতু গম এবং অন্যান্য পণ্য স্টক মার্কেটে লেনদেন হয় এবং তাই দাম ওঠানামা করে।”
    এগুলো ছিল দুর্ভিক্ষ আসার সম্ভাব্য কারণগুলো। এখন এর পরিত্রাণ কীভাবে পাব? তা নিয়ে আমার মতামত:

    সরকারের করণীয়:

    ১। কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং কৃষকরা যেন তা খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
    ২। সিন্ডিকেট নিরসণ করা।
    ৩।অধিক সময় ভালো থাকবে এমন শস্যবীজ প্রস্তুতের ব্যবস্থা করা।
    ৪। বেশি বেশি খাদ্য সঞ্চয় করা।
    ৫। খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য ভালো গুদামের ব্যবস্থা করা যেন খাদ্যশস্য পঁচে না যায়।
    ৭। সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করা।

    আমাদের করণীয়:

    ১। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে এ ক্রাইসিস থেকে পানাহ চাওয়া।
    ২। যেকোনো ধরনের তৈরি-তরকারি একটু হলেও চাষ করা।
    ৩। সঞ্চয় করা।
    ৪। অপচয় না করা।
    ৫। আশেপাশের কৃষক ভাই থাকলে তাদের আর্থিক সাহায্য করা যেন সে ভালোভাবে
    চাষ করতে পারে।
    ৬। আশেপাশে কোন সিন্ডিকেট করা ব্যক্তিকে দেখলে পুলিশকে অবহিত করা।
    ৭। সরকারের নির্দেশনামা মেনে চলা